স্বাধীন প্রতিদিন আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ৪ অক্টোবর ২০২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে কাতারের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছেন। সদ্য জারি করা এই আদেশে বলা হয়েছে, কাতারের ওপর যেকোনো ধরনের সশস্ত্র আক্রমণকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রয়োজনে সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত থাকবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘোষণার মাধ্যমে কাতার কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের একটি 'নিরাপত্তা ছাতার' নিচে চলে এল, যা অনেকটা ন্যাটো জোটের ধারা অনুযায়ী কাজ করবে। এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এল, যখন কাতার মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম কূটনৈতিক খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে এবং ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের সম্পর্ক আগেই ঘনিষ্ঠ ছিল। দোহায় অবস্থিত বিশাল আল উদেইদ বিমানঘাঁটি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের হামলা ও ইসরায়েলি অভিযানে কাতারের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। বিশ্লেষকদের মতে, এসব ঘটনার প্রেক্ষিতেই ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ।
তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠছে। বিশ্লেষক ড্যান শাপিরো মনে করেন, কাতারের প্রতি মার্কিন নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি মূলত হামাসকে আলোচনায় টানার কৌশল। তার মতে, দোহায় অবস্থানরত হামাস নেতারা এই ঘোষণার মাধ্যমে কার্যত নিরাপত্তা পাচ্ছেন, যা ইসরায়েলকে ক্ষুব্ধ করতে পারে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, এই ঘোষণায় ইসরায়েল ক্ষুব্ধ, বিশেষ করে যখন তাদের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে হামাস নেতারা যেখানেই থাকুক, তারা নিরাপদ নয়। অন্যদিকে, উপসাগরীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘোষণার পর সৌদি আরবও একই ধরনের নিরাপত্তা গ্যারান্টি দাবি করতে পারে, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও কূটনৈতিক চাপ বাড়বে।
এই নির্বাহী আদেশ নিয়ে ট্রাম্পের স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিয়েও বিতর্ক চলছে। কারণ সম্প্রতি ট্রাম্প অর্গানাইজেশন কাতারে একটি বিলাসবহুল গলফ রিসোর্ট নির্মাণের চুক্তি করেছে এবং কাতার সরকার তাঁকে একটি ৭৪৭ জেট উপহার দিয়েছে, যা তিনি ব্যক্তিগত বিমানের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে চান। সমালোচকদের অভিযোগ, ট্রাম্প তাঁর ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থকে পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন। যদিও হোয়াইট হাউজ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আদেশ কংগ্রেসের অনুমোদিত কোনো আইন নয়, বরং প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ। ফলে ভবিষ্যতের কোনো প্রেসিডেন্ট চাইলে এটি বাতিল বা সংশোধন করতে পারবেন। ডেমোক্র্যাটদের একটি অংশ ইতিমধ্যে এ নিয়ে কংগ্রেসে তদন্ত দাবি করেছে।
সব মিলিয়ে, কাতারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণ ঘোষণাটি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কৌশলগত বাস্তবতা তৈরি করেছে। এতে কাতার স্বস্তি পেলেও ইসরায়েল ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জটিল হতে পারে। আর এ থেকেই তৈরি হতে পারে এক নতুন অস্থিতিশীল অধ্যায়।
📰 আরও খবর জানতে ভিজিট করুন: www.shadinpratidin.com
📣 শেয়ার করুন | মতামত দিন
মন্তব্য করুন