নিজস্ব প্রতিবেদক | স্বাধীন প্রতিদিন | ১০ নভেম্বর ২০২৫, সোমবার
বাগেরহাট জেলার সংসদীয় আসন চারটি বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের মাধ্যমে জেলার আসন সংখ্যা তিনে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। সোমবার (১০ নভেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর আদালত রুল জারি করে জানতে চান— কেন বাগেরহাটের চারটি আসন বহাল রাখার নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং কেন নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেটকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। এই রুলের শুনানি শেষে আজ আদালত রায় ঘোষণা করেন, যেখানে বাগেরহাটের চারটি আসন বহাল রাখার পক্ষে রায় দেওয়া হয়।
বাগেরহাট প্রেসক্লাব, জেলা আইনজীবী সমিতি, জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জেলা ট্রাক মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন আসন সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দুটি রিট দায়ের করেছিল। রিটে বিবাদী করা হয় সরকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন বাগেরহাট জেলার চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রাথমিক প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি গঠন করে আন্দোলনে নামে। জনগণের মতামত উপেক্ষা করে আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে— এই অভিযোগে তারা একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করে, যার মধ্যে হরতাল, অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ ছিল উল্লেখযোগ্য।
তাদের দাবি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন ৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে বাগেরহাটকে তিনটি আসনে ভাগ করে— সদর, চিতলমারী ও মোল্লাহাট নিয়ে বাগেরহাট-১; ফকিরহাট, রামপাল ও মোংলা নিয়ে বাগেরহাট-২; এবং কচুয়া, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা নিয়ে বাগেরহাট-৩। এতে জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী আসন বাদ পড়ে যায়, যা নিয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা ও রাজনৈতিক নেতারা বলেন, বাগেরহাটের জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থা ও প্রশাসনিক কাঠামোর দিক থেকে চারটি আসনই যৌক্তিক ছিল। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তারা শুরু থেকেই এই পরিবর্তনের বিরোধিতা করেন।
১৯৬৯ সাল থেকে বাগেরহাট জেলায় চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দীর্ঘ এই ঐতিহ্য ও প্রশাসনিক কাঠামো বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট আজ রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বাগেরহাটের আসন সংখ্যা কমানোর কোনো আইনগত বা যৌক্তিক ভিত্তি নেই। ফলে জেলার চারটি আসন আগের মতোই বহাল থাকবে।
এই রায়ের ফলে বাগেরহাট জেলার জনগণ ও স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতারা আদালতের এই রায়কে “জনগণের রায়ের বিজয়” বলে অভিহিত করেছেন।
হাইকোর্টের এই আদেশে স্পষ্ট হয়েছে যে, জনগণের মতামত উপেক্ষা করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না— জনগণের অংশগ্রহণই গণতন্ত্রের ভিত্তি।
📰 আরও খবর জানতে ভিজিট করুন:
www.shadinpratidin.com
💬 মতামত দিন | 🔁 বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন