হিন্দু ভোটব্যাংকের সমীকরণে নন্দী এগিয়ে!
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন প্রতিদিন
খুলনা–১ (দাকোপ–বটিয়াঘাটা) আসনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা কৃষ্ণ নন্দী। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর এলাকায় ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে—একজন হিন্দু নেতাকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দেখা বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে প্রায় নজিরবিহীন।
২০০৩ সাল থেকে জামায়াতে যুক্ত কৃষ্ণ নন্দী দাবি করছেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি “শতভাগ আশাবাদী।” তিনি বলেন, “সব দুঃসময়েও জামায়াতের পাশে ছিলাম। স্থানীয় পর্যায়ে সনাতন কমিটি ও হিন্দু কমিটির নেতৃত্বে আছি। তাই দাকোপ-বটিয়াঘাটায় দল আমাকে এগিয়ে রাখবে।”
দলীয় সূত্রেও জানা গেছে, খুলনা–১ এলাকার উল্লেখযোগ্য অংশে হিন্দু ভোটার সংখ্যাগরিষ্ঠ। এ কারণে তার প্রার্থিতা নিয়ে ইতিবাচক সংকেত রয়েছে বলেও স্থানীয়রা মনে করছেন। প্রশ্ন উঠেছে—হিন্দু সম্প্রদায় কি তাকে সমর্থন করবে?
কৃষ্ণ নন্দীর ভাষ্য, “জামায়াতে হিন্দু–মুসলমান সবাইকে মানুষ হিসেবেই দেখা হয়। আমার সম্প্রদায়ের মানুষ বলেছেন—আপনি হিন্দু মানুষ, আমরা দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেব।”
তার দাবি, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ন্যায়-সততার ভিত্তিতে ভোট দিতে আগ্রহী, ধর্মের ভিত্তিতে নয়।
মনোনয়ন পেলে এবং নির্বাচিত হলে তার প্রথম তিন অঙ্গীকার—
সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা গঠন, চাঁদাবাজি দমন, মাদক নির্মূল।
এ ছাড়া দাকোপ–বটিয়াঘাটার ভয়াবহ নদীভাঙন রোধে জরুরি প্রকল্প আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
জামায়াতকে বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আদর্শভিত্তিক জামায়াত হলো ন্যায়–সততার দল। এখানে দুর্নীতি নেই, চাঁদাবাজি নেই, মাদক নেই। শান্তি-সমৃদ্ধির দল বলে আমি জামায়াতকে বেছে নিয়েছি।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের দাপটে থাকা সময়টিতে তিনি বিভিন্নভাবে কোণঠাসা ছিলেন। এলাকার তৎকালীন মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ তাকে সন্দেহের চোখে দেখতেন বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে বিএনপি এখনও খুলনা–১ আসনে প্রার্থী ঘোষণা না করায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র স্পষ্ট হয়নি। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন—
আমীর এজাজ খান, জিয়াউর রহমান পাপুল, পার্থ দেব মণ্ডল, কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল।
বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে দাকোপ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কিশোর কুমার রায়ও নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে না থাকায় ভোটারদের মধ্যে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। কৃষ্ণ নন্দীর বিশ্লেষণ—এলাকায় হিন্দুরাই সংখ্যায় বেশি এবং বাধাহীনভাবে ভোট দেওয়ার পরিবেশ তৈরি হলে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট পড়ার সম্ভাবনা অনেক। তার মতে, এই পরিস্থিতি তাকে বাড়তি সুবিধা দেবে।
মনোনয়ন পাওয়া না–পাওয়া এখনো দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার শুরু–শেষ এখন কৃষ্ণ নন্দীকে ঘিরেই। তিনি সত্যিই প্রার্থী হলে শুধু দাকোপ–বটিয়াঘাটা নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও নতুন আলোচনার জন্ম দেবে—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
📰 আরও খবর জানতে ভিজিট করুন:
www.shadinpratidin.com
💬 মতামত দিন | 🔁 বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন