নিজস্ব প্রতিবেদক | স্বাধীন প্রতিদিন |
সমগ্র দেশের মতো খুলনার রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল জুলাই আন্দোলনের দিনগুলোতে— আর সেই অধ্যায়ের অন্যতম মুখ ছিলেন আহম্মদ হামীম রাহাত। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন পরবর্তী সময়ে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’র সংগঠক হিসেবে রাহাতের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ শিক্ষার্থী, সুশীল সমাজ, শ্রমজীবী ও তরুণ প্রজন্মকে একত্রিত করে তিনি খুলনায় নাগরিক কমিটির কার্যক্রমে প্রাণসঞ্চার করেছিলেন। পরবর্তীতে নাগরিক কমিটির ধারাবাহিকতায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠিত হলে, রাহাতকেই খুলনা মহানগরের অন্যতম সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
এনসিপি গঠনের প্রথম দিকেই খুলনায় অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সমাবেশে রাহাতের নেতৃত্বে তরুণদের ঢল নামে। দলীয় নেতাদের ভাষায়, “রাহাতের নেতৃত্বে খুলনা এনসিপি শতভাগ জুলাই চেতনায় সংগঠিত হয়েছিল। তার বলিষ্ঠ উপস্থিতি ও বক্তব্যে মানুষ নতুন রাজনৈতিক বিকল্পের আশা দেখেছিল।”
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই উজ্জ্বল যাত্রাপথে দেখা দিয়েছে হতাশা ও বিভ্রান্তি। এনসিপির ভেতরে অস্বচ্ছতা, ক্ষমতার লড়াই, তৃণমূল অবমূল্যায়ন ও কোরমবাজী এবং নেতৃত্ব সংকট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই তরুণ নেতা।
সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পোস্টে আহম্মদ হামীম রাহাত লিখেছেন,
“জুলাই আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি ছিল ব্যক্তি ও দলনিরপেক্ষতা। কিন্তু পরবর্তীতে কিছু নেতা ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও তারকাখ্যাতি অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটিকে ব্যবহার করেন।”
তিনি আরও লেখেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এনসিপির ভেতরে আভ্যন্তরীণ বিভেদ, অর্থনৈতিক অস্বচ্ছতা ও তৃণমূল নেতৃত্বে অবমূল্যায়ন শুরু হয়। “এভাবে দলটি সাধারণ মানুষের আস্থা হারাতে শুরু করেছে,” বলেন তিনি।
তার এই মন্তব্যের পর খুলনা এনসিপির ভেতর এবং বাইরের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা। দলীয় সূত্র বলছে, রাহাতের সঙ্গে একাধিক নেতা ও কর্মীও দল ছাড়ার বিষয়ে ভাবছেন।
এক তৃণমূল নেতা বলেন, “রাহাত ভাই শুধু সংগঠক নন, তিনি ছিলেন জুলাই আন্দোলনের প্রাণপুরুষ। তার মতো সৎ, আদর্শিক নেতারাই আমাদের রাজনীতিকে নতুন পথে নিয়ে যেতে পারেন।”
আরেক তরুণ কর্মীর ভাষায়, “আমরা যারা নাগরিক কমিটি থেকে এসেছি, তারা রাহাত ভাইয়ের নেতৃত্বেই রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলাম। আজ যদি তিনিই সরে যান, তাহলে এনসিপির আদর্শগত ভিত্তি আর থাকবে না।”
খুলনার সাধারণ নাগরিকদের মাঝেও রাহাতের প্রতি সহানুভূতির ঢেউ দেখা যাচ্ছে। শহরের এক ব্যবসায়ী বলেন, “রাহাত ছিলেন আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার পাশে রাজপথে। তার মতো তরুণ নেতা রাজনীতি থেকে দূরে গেলে তা সবার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”
রাহাত নিজেও বলেন, “এনসিপির অনেক নেতা অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে তারা ব্যর্থ। এসব বিষয়ে আমি শিগগিরই শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব। খুলনার বর্তমান কর্মকাণ্ডে আমি সন্তুষ্ট নই।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আহম্মদ হামীম রাহাতের মতো তরুণ, নীতিবান ও সংগ্রামী নেতা এনসিপি থেকে সরে গেলে খুলনায় দলের সাংগঠনিক কাঠামো বড় ধাক্কা খাবে। কারণ নাগরিক কমিটি থেকে এনসিপি পর্যন্ত পুরো যাত্রাপথে তার ভূমিকা ছিল নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু।
বর্তমানে খুলনার রাজনৈতিক মহল জুড়ে একটাই প্রশ্ন ঘুরছে— “আহম্মদ হামীম রাহাত কি সত্যিই এনসিপি ছাড়ছেন?” যদি তাই হয়, তবে তা শুধু একটি দলের জন্য নয়, পুরো খুলনার তরুণ নেতৃত্ব নির্ভর রাজনীতির জন্যই হবে এক বড় মোড় পরিবর্তনের সূচনা।
📰 আরও খবর জানতে ভিজিট করুন:
www.shadinpratidin.com
💬 মতামত দিন | 🔁 বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন