জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদ গোপনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় বেলাল চৌধুরী অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন এবং সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন। ২০২২ সালের জুলাই মাসে জমা দেওয়া তার সম্পদ বিবরণীতে তিনি ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সম্পদ দেখান। তবে দুদকের অনুসন্ধানে তার নামে ১৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনি প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ গোপন করেন।
দুদকের তদন্তে আরও জানা গেছে, দায়-দেনা বাদ দিয়ে তার নীট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বৈধ আয় হিসেবে পাওয়া যায় ১১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, কিন্তু বাস্তবে তিনি এর চেয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার সম্পদ বেশি অর্জন করেছেন।
দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম বলেন, “বেলাল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সাল থেকেই তদন্ত চলছিল। সর্বশেষ সম্পদ বিবরণীতে অসামঞ্জস্য পাওয়ায় প্রায় ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।”
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালী জেলায় জমি, ফ্ল্যাট, প্লট ও বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারসহ বিপুল সম্পদ তিনি অনিয়মের মাধ্যমে ক্রয় করেছেন। মামলাটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় দায়ের করা হয়েছে।
সম্প্রতি বেলাল চৌধুরীর বিদেশ সফর নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তিনি গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। অথচ তার সরকারি আদেশ (জিও) ছিল ইন্দোনেশিয়ায় প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার জন্য।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে বেলাল চৌধুরী ১০ দিনের সময় চান। তিনি ব্যাখ্যায় বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পরবর্তীতে দুই মাসের জন্য বিদেশযাত্রার অনুমতি পেয়েছিলেন। সরকারি জিও অনুযায়ী ১৯–২৬ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়ার প্রশিক্ষণে অংশ নেন, আর পথে ট্রানজিট হিসেবে সিডনিতে ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করেন। দেশে ফিরে আদালতকে বিষয়টি অবহিত করেছেন এবং প্রয়োজনীয় দলিল সংগ্রহে সময় লাগায় আরও ১০ কার্যদিবস সময় প্রার্থনা করেছেন।
এর আগে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকার একটি আদালত তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। দুদকের আবেদনে বলা হয়, বেলাল হোসেন চৌধুরী ও তার পরিবারের নামে-বেনামে দেশে এবং কানাডাসহ বিদেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে। তিনি তার ভাইসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রিয়েল এস্টেট, ডেভেলপার কোম্পানি ও শেয়ারবাজারে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন।
📰 আরও খবর জানতে ভিজিট করুন: www.shadinpratidin.com
💬 মতামত দিন | 🔁 শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন