নিজস্ব প্রতিবেদক | স্বাধীন প্রতিদিন
রূপালী ব্যাংক পিএলসি’র সাময়িক বরখাস্ত কর্মকর্তা মো. বায়েজিদ মোল্লার বিরুদ্ধে ৪ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (তারিখ) খুলনায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন প্রতারণার শিকার একাধিক ঋণগ্রহীতা।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষে দেবশংকর বিশ্বাস বলেন, বায়েজিদ মোল্লা রূপালী ব্যাংকে ২০০০ সালে যোগদানের পর খুলনা বিভাগের বিভিন্ন শাখায় দায়িত্ব পালন করেন। নতুনবাজার, রাজাপুর ও সদর শাখায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে একাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন ঋণ ডকুমেন্টে স্বাক্ষর নিয়ে রেখে দেন। পরবর্তীতে তিনি কৌশলে এসব ফাইল কুষ্টিয়ায় স্থানান্তর করে সেখানে সঞ্চয়ী হিসাব খুলে গ্রাহকদের নামে ৫-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ উত্তোলন করেন।
২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট পর্যন্ত কুষ্টিয়া কর্পোরেট শাখার এজিএম থাকা অবস্থায় ব্যাংকের নীতিমালা লঙ্ঘন করে কোটি কোটি টাকা ঋণ বিতরণে অনিয়ম করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ কারণে তিনি ২০১৬ সালে প্রথমবার সাময়িক বরখাস্ত হন। এরপর ফরিদপুর জোনাল অফিসে বদলি হলেও সেখানেও তার প্রতারণার কর্মকাণ্ড চলতে থাকে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঋণ গ্রহীতাদের মর্টগেজ হিসেবে দেওয়া শত শত চেককে হাতিয়ার করে বায়েজিদ মোল্লা তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে চেক ডিজঅনার মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রানি করেন। যারা তার অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, তাদের বিরুদ্ধে খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, কুষ্টিয়া, লালমনিরহাট ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় একের পর এক মামলা করা হয়।
মামলাগুলোর বিশ্লেষণে দেখা যায়, অনেক বাদী ও সাক্ষী একে অপরকে চেনেন না। বেশিরভাগই বায়েজিদের আত্মীয় বা ব্যাংকের খেলাপি ঋণগ্রহীতা। অভিযোগ রয়েছে, তাদের ভয়ভীতি বা প্রলোভন দেখিয়ে মামলা করতে বাধ্য করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা জানান, মামলাবাজির এ চক্রে বায়েজিদের ভাই রহমত আলী মোল্লা, শ্যালক কামরুল হাসান, ভাগ্নে রাজিব মোল্লা, ভাইপো ইয়াছিন মোল্লা, আত্মীয় মেহেদী হাসানসহ আরও অনেকে জড়িত। কিছু মামলার বাদী পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছেন, তারা বায়েজিদের চাপে পড়ে মামলা করেছিলেন এবং পরবর্তীতে এফিডেভিটের মাধ্যমে মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, রূপালী ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট ও শৃঙ্খলা বিভাগ (২০২৩ ও ২০২৪) অনুসারে বায়েজিদ মোল্লা ব্যাংকের নীতিমালা লঙ্ঘন করে কোটি কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করেছেন, যা ব্যাংককে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলেছে।
ভুক্তভোগীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
• তাদের মর্টগেজ হিসেবে রাখা চেকগুলো বায়েজিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা
• দায়ের করা সকল ভুয়া মামলা প্রত্যাহার
• মিথ্যা মামলার বাদী ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা
• বায়েজিদের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, আয়কর রিটার্ন ও ব্যাংক লেনদেন তদন্ত
• বায়েজিদ মোল্লাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগী লিলিয়া খাতুন, এস কে এ হাসান, শক্তিপদ বসু, গোলাম রসুল, আসলাম সিকদার, শাহাদাৎ হোসেন, সাদিয়া হোসেন ও পিয়ারু মলসহ আরও অনেকে।
📰 আরও খবর জানতে ভিজিট করুন:
www.shadinpratidin.com
💬 মতামত দিন | 🔁 বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন