নিউজ ডেক্সঃ স্বাধীন প্রতিদিন
খুলনার পাইকগাছায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন (৪৪)। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয় নেতাকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বৃহস্পতিবার পাইকগাছা পৌর বিএনপির সম্মেলনে দলীয় প্রতিপক্ষের হাতে লাঞ্ছিত হন মোশারফ। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তিনি বিষপান করেন।
দলীয় কোন্দল ও মারধরের অভিযোগ
বিষয়টি নিয়ে মোশারফের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরা জানান, তিনি বিএনপির উপজেলা সভাপতি ডা. আব্দুল মজিদের অনুসারী ছিলেন এবং সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে সেলিম রেজা লাকীর পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন। সম্মেলনের দিন বিকালে প্রতিপক্ষ প্রার্থী কামাল আহমেদ সেলিম নেওয়াজের ভাই রাজীব নেওয়াজ তাকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ ও মারধর করেন। এর আগেও একাধিকবার তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছিল।
বন্ধুর ভাষ্যে “পরিকল্পিত হত্যা”
মোশারফের বন্ধু অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিন সুমন বলেন,
“মোশারফ খুব আবেগী ও দলপ্রেমী ছিলেন। প্রকাশ্যে মারধরের পর থেকে চুপচাপ হয়ে যায়। পরদিন সকালে তার মেয়ে ফোন করে জানায়, সে বিষ খেয়েছে। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর খুলনা মেডিকেলে রেফার করা হয়, সেখান থেকে গাজী মেডিকেলে। আমি নিশ্চিত, এটি আত্মহত্যা নয়, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
সাংবাদিকের ওপর হামলা, ছবি ডিলিট
মোশারফের মৃত্যুর সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বাধার মুখে পড়েন সাংবাদিকরা। এক পর্যায়ে নিহতের পরিবারের আহাজারির ছবি তুলতে গেলে এক সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে তার গ্যালারির সব ছবি ডিলিট করে দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারাও, তবে তারা ছিলেন নীরব।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন,
“ব্যক্তিগত কারণে মনোকষ্টে তিনি বিষ পান করেছিলেন। হামলার বিষয়টি জানি না। সাংবাদিকদের সঙ্গে আচরণের বিষয়টি নিউজ করার মতো কিছু না।”
অভিযুক্ত পক্ষের অসহযোগিতা
ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত রাজীব নেওয়াজের ভাই সেলিম নেওয়াজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনেই তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং বলেন,
“আমাকে ফোন দিয়েছেন কেন? নেতাদের ফোন দেন।”
পরে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।
মোশারফ হোসেনের মৃত্যুতে পাইকগাছা বিএনপি ও স্থানীয় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সহিংসতা থেকে জন্ম নেওয়া এই মৃত্যু ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি।
মন্তব্য করুন