মাদকের ছোবলে বিপর্যস্ত দেশ
পাবনা প্রতিনিধি | স্বাধীন প্রতিদিন
পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের নামাজগ্রামে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২ নভেম্বর) রাত আটটার দিকে নিজ বাড়িতে নামাজরত অবস্থায় প্রবাসফেরত বাবা নিজাম প্রামানিককে (৬০) কুপিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে মাদকাসক্ত ছেলে আতিক প্রামানিক (৩৫)।
নিহত নিজাম প্রামানিক ওই এলাকার মৃত ইব্রাহিম প্রামানিকের ছেলে। বহু বছর কুয়েতে প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন তিনি। পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয়দের সহায়তায় অভিযুক্ত আতিক প্রামানিককে আটক করা হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আতিক দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত ছিলেন। প্রায়ই বাবার কাছে টাকা চাইতেন, না পেলে গালিগালাজ ও অশান্তি সৃষ্টি করতেন। রবিবার রাতেও একইভাবে টাকা না পেয়ে বাবার ওপর ক্ষিপ্ত হন তিনি। এরপর নামাজরত বাবাকে ডেকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে রশি দিয়ে শ্বাসরোধ ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। পরিবারের সদস্যরা সন্দেহবশত ঘরে ঢুকে নিজাম প্রামানিকের নিথর দেহ দেখতে পান এবং পুলিশে খবর দেন।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি পারিবারিক কলহ ও মাদকাসক্তির জেরে সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত আতিক প্রামানিক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।”
নিহতের বড় ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, “আমার ভাই আতিক অনেক দিন ধরেই মাদকের নেশায় আসক্ত। বাবা ও পরিবারের সবাই তাকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। মাদক কেনার টাকা না পেলে সে সবাইকে মারধর করত, বাবাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছিল।”
এ ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোক ও ক্ষোভের ছায়া। স্থানীয়দের দাবি, মাদকের কারণে এমন ভয়াবহ পারিবারিক বিপর্যয় এখন প্রায় প্রতিটি এলাকায় দেখা যাচ্ছে।
আরো পড়ুন..
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাদকাসক্তি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য এক বড় হুমকিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে যুবসমাজের মধ্যে ইয়াবা, আইস, গাঁজা ও ফেনসিডিলের বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অভিযান চললেও, সীমান্তপথে মাদক প্রবাহ ও এর সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট এখনো দমন করা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক শুধু ব্যক্তির নয়, পুরো পরিবারের ধ্বংস ডেকে আনে। বাবা-মায়ের ওপর সন্তানের নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড কিংবা আত্মহত্যা— এমন ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, সচেতনতা বৃদ্ধি, পুনর্বাসনকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো এবং পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন শক্ত করা ছাড়া এ সংকট কাটানো সম্ভব নয়।
পাবনার এই মর্মান্তিক ঘটনাটি আবারও সেই ভয়াবহ বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়েছে— মাদক শুধু নেশা নয়, এটি এক নীরব ঘাতক, যা মানুষকে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।
📰 আরও খবর জানতে ভিজিট করুন:
www.shadinpratidin.com
💬 মতামত দিন | 🔁 বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন