নিউজ ডেক্সঃ স্বাধীন প্রতিদিন | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
খুলনা: খুলনার ঐতিহ্যবাহী ‘বাস্তহারা কলোনী’ থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, পুরো এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
সংঘর্ষের সূচনা
প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’দিন আগে মাইকিং করে বাসিন্দাদের সরে যেতে অনুরোধ করা হলেও, তারা রোববার সকাল থেকে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে। সকাল ১০টার পর পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং স্থানীয়রা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটে টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
এ সময় উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহৃত বুলডোজারের কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে গুরুতর আহত ২৫ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
"ভূমিহীন, কিন্তু ঘর ছাড়া হতে রাজি না" — স্থানীয়দের দাবি
বাস্তহারা কলোনির বাসিন্দা মো. মনিরুল হক বাবুল বলেন,
“আমরা ভূমিহীন, সরকারের কাছে বারবার বিকল্প আশ্রয়ের অনুরোধ করেছি। কিন্তু সে ব্যবস্থা না করেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিলাম, কিন্তু পুলিশ ভেতরে ঢুকে লাঠিচার্জ শুরু করে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযানে কিছু সিভিল পোশাকে থাকা ব্যক্তিদের হাতে লাঠি দেখা গেছে, যাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা
গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যদিও এলাকাটি ‘বাস্তহারা কলোনি’ নামে পরিচিত, তবে সরকারি খাতায় এটি ‘বয়রা আবাসিক এলাকা’। ১৯৮৭ সালে এই এলাকার সি-ব্লকের ৫৫টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪২টি প্লট দীর্ঘদিন ধরে বেদখল থাকায় বরাদ্দপ্রাপ্তরা জমি বুঝে পাননি। বারবার চেষ্টা করেও উচ্ছেদ সম্ভব হয়নি বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান
খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী বলেন,
“সংঘর্ষে আমিসহ ১৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছি। অভিযানে পুলিশ ছাড়াও যৌথ বাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট ও স্থানীয় প্রশাসন অংশ নেয়।”
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) রাশিদুল ইসলাম জানান,
“সংঘর্ষের পর গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আপাতত উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করেছে। বর্তমানে পুলিশও কলোনি এলাকা থেকে সরে গেছে।”
সামাজিক সংকট না সমাধান?
দীর্ঘদিনের জমি জটিলতা, ভূমিহীনদের বাস্তুচ্যুতি, ও উচ্ছেদের আগেই বিকল্প ব্যবস্থা না থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে। আলোচনার মাধ্যমে টেকসই সমাধান না হলে এই সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা।