নিজস্ব প্রতিবেদক | মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের রাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ধর্ষণ মামলাকে কেন্দ্র করে। অভিযোগকারী মানিকগঞ্জ জেলা মহিলা দলের স্থগিতকৃত প্রচার সম্পাদক রাহা মাহমুদা পলি দাবি করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে আমান উল্লাহ আমান তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন, পরে সম্পর্ক অস্বীকার করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করান।
রাহা মাহমুদা পলি, যিনি ২০১৬/১৭ সাল থেকে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং পরবর্তীতে মহিলা দলে সক্রিয় হন, বলেন— “আমি বিশ্বাস করেছিলাম, আমান আমাকে সত্যি ভালোবাসে, সে বিয়ের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখি সবই ছিল প্রতারণা।” তিনি আরও দাবি করেন, আমানের বিরুদ্ধে মুখ খোলার পর থেকেই তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়, তার ফেসবুক আইডি রিপোর্ট করে ডিজেবল করা হয়, এবং দলের উচ্চপর্যায় থেকে চাপ দিয়ে তার পদ সাময়িক স্থগিত করা হয়।
এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর পলি নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্টের মাধ্যমে আমানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগ আনেন। পোস্টটি ভাইরাল হতে না হতেই তার আইডি অচল হয়ে যায়। মাত্র ঘন্টাখানেক পর জেলা মহিলা দল থেকে পলিকে বহিষ্কারের ঘোষণা আসে। এতে সচেতন মহলে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে— কেন একজন নারী যখন নিজের উপর হওয়া নির্যাতনের অভিযোগ তোলে, তখন তাকে দলীয় শাস্তির মুখে পড়তে হয়, অথচ অভিযুক্ত নেতা সংগঠনে আগের মতো সক্রিয় থাকেন?
আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাহা মাহমুদা পলি মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি (মিস পিটিশন নং ১৪১/২৫) গ্রহণ করে আদালত প্রাথমিকভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এজাহারে বলা হয়েছে, আমান জাতীয় পর্যায়ের নেতা পরিচয়ে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান, প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন, পরে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পলিকে দল থেকে বহিষ্কারের ব্যবস্থা করেন।
ঘটনার পর মানিকগঞ্জ ও ঢাকায় বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। একাধিক নেত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “একজন নারী নেত্রী যখন সাহস করে এমন অভিযোগ আনেন, তখন দলের উচিত ছিল বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা। কিন্তু এখানে দেখা গেছে উল্টো ভুক্তভোগীকেই রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করা হয়েছে।”
এদিকে ছাত্রদল বা কেন্দ্রীয় বিএনপি এখন পর্যন্ত আমান উল্লাহ আমানের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য দেয়নি। বরং দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আমান এখনও তার সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছেন। এতে প্রশ্ন উঠেছে— দলের ভেতরে প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে কি বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু থাকে?
উক্ত মামলাটি শুধু একটি ব্যক্তিগত অভিযোগ নয়, বরং রাজনীতিতে নারীর নিরাপত্তা ও ন্যায়ের প্রশ্নকে আবারও সামনে এনেছে। একজন নারী মানবাধিকারকর্মী বলেন, “রাজনীতিতে নারীরা শুধু প্রতীক নয়, তারা কর্মীও। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা যখন নিজের দলের ভেতরেও নিশ্চিত হয় না, তখন এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য ভয়াবহ সংকেত।”
এদিকে অভিযোগ আনার পর থেকে রাহা মাহমুদা পলি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানা গেছে। তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সূত্র থেকে তাকে মামলা তুলে নেওয়ার চাপ দেওয়া হচ্ছে। তবু তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন এবং বলেছেন, “আমি বিচার চাই— আমার মতো কেউ যেন আর এমন প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার না হয়।”
বর্তমানে মামলাটি মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। আদালত তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়া পর্যন্ত কোনো পক্ষের প্রতিক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হবে না।
তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রশ্ন একটাই— দলের প্রভাবশালী পুরুষ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে ন্যায়বিচার কোথায় হারিয়ে যায়?
📰 আরও খবর জানতে ভিজিট করুন:
www.shadinpratidin.com
💬 মতামত দিন | 🔁 বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন