নিজস্ব প্রতিবেদক | স্বাধীন প্রতিদিন
গণভোটকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয়েছে তুমুল প্রচারণা। ৩০ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ পোস্টের ঢল। সারাদেশের নিউজফিড এখন ভরপুর গণভোটের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি ও স্লোগানে।
জানা গেছে, গণভোটের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলো। তারা ফেসবুকে ‘না’ প্রচারণা শুরু করেছে। অন্যদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির গণভোটের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ‘হ্যাঁ’ প্রচারণায় নেমেছে।
বিএনপিপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির নিজের প্রোফাইলে “না” লিখে একটি পোস্ট দিয়েছেন, যা ভাইরাল হয়েছে। অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের ভেরিফায়েড পেজে শুধু একটি শব্দ—“হ্যাঁ”—লিখে পোস্ট করেছে, যা সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে দ্রুত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা হস্তান্তর করেন কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ।
তিনি জানান, সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি নির্দিষ্ট বিষয়ে জনগণের মতামত জানতেই এই গণভোটের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। “আগামী জাতীয় সংসদ তার প্রথম ৯ মাসের মধ্যেই সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করবে,” বলেন তিনি।
যদি সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জুলাই সনদের প্রস্তাবনাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে, এমন ব্যবস্থাও প্রস্তাবনায় রয়েছে।
গণভোট ইস্যুতে রাজনৈতিক শিবিরে স্পষ্ট বিভাজন দেখা দিয়েছে। বিএনপি এই গণভোটের সময়সূচি ও প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন,
“বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো এখনো পুরোপুরি নিরপেক্ষ নয়। এমন অবস্থায় গণভোট জনগণের প্রকৃত মতামত প্রতিফলিত করবে কি না, সেটি নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির গণভোটের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা বলছে, জনগণের প্রত্যক্ষ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব একটি “ইতিবাচক ও গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ”।
জামায়াতের এক নীতিনির্ধারক বলেন,
“জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো বড় পরিবর্তন স্থায়ী হয় না। গণভোটের মাধ্যমে সেই অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।”
ড. আলী রীয়াজ বলেন, “যেসব দল এখনো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি, তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এনসিপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা আশাবাদী।”
গণভোটকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও অনলাইন পরিসর দুই-ই এখন উত্তপ্ত। বিএনপি সংশয় প্রকাশ করলেও, জামায়াত-শিবির ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন এ প্রস্তাবকে জনগণের মতামত জানানোর একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে। বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন কয়েক সপ্তাহে এই ‘হ্যাঁ-না’ প্রচারণা জাতীয় নির্বাচনের আগাম রাজনৈতিক তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে।
📰 আরও খবর জানতে ভিজিট করুন:
www.shadinpratidin.com
💬 মতামত দিন | 🔁 বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন