✍️ স্বাধীন প্রতিদিন ডেস্কঃ
দেশের চলমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এর দাম নিয়ন্ত্রণ করে এক হাজার টাকার মধ্যে রাখা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলেন, “বর্তমানে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের দাম ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা শিল্প ও গৃহস্থালি ব্যবহারে ভোক্তাদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মূল্য সর্বোচ্চ এক হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।”
রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে এলপিজি: অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক পলিসি কনক্লেভে শনিবার এ কথা বলেন তিনি। কনক্লেভটির আয়োজন করে অর্থনৈতিক দৈনিক বণিক বার্তা, যেখানে অংশ নেন সরকার, বেসরকারি খাত, গবেষক, ব্যবসায়ী এবং নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষ প্রতিনিধি।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের হুঁশিয়ারি
জ্বালানি উপদেষ্টা জানান, বাজারে অতিরিক্ত দামে এলপিজি বিক্রির বিরুদ্ধে শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। “বিনা কারণে দাম বাড়িয়ে লাভের টাকা বিদেশে পাচার করা চলবে না। ব্যবসায়িক নৈতিকতা নিশ্চিত করতে হবে,”— বলেন তিনি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, গ্যাস খাতে অবৈধ সংযোগ এবং অপরিকল্পিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনার কারণে জ্বালানি খাতে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে, যার পেছনে আছেন কিছু রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী।
গবেষণায় উঠে এলো গ্যাস ঘাটতির চিত্র
কনক্লেভে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য ম. তামিম। তিনি জানান, দেশে প্রতিদিন প্রায় ১৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। এলপিজি দিয়ে শিল্প খাতে ৩৫–৪০ শতাংশ খরচ সাশ্রয় সম্ভব হলেও, এ খাতের মজুত এখনো সীমিত।
নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে এলপিজি খাতে
গ্যাস-সম্পর্কিত অগ্নিকাণ্ড দিন দিন বেড়ে চলেছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ৫৮০টি এলপিজি-সংক্রান্ত। তিনি বলেন, “সঠিক প্রশিক্ষণ ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”
বিএনপি ও বিইআরসি’র প্রতিক্রিয়া
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, “সমস্যার জন্য সবাইকে দোষারোপ না করে বিকল্প জ্বালানি পরিকল্পনা নিতে হবে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।”
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ জানান, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি মাসে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে, যাতে ভোক্তা পর্যায়ে সহনীয় মূল্যে এলপিজি সরবরাহ করা যায়।
ব্যবসায়ীদের ভিন্নমত
এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মোহাম্মদ আমিরুল হক জানান, তারা বিইআরসি নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস সরবরাহ করেন এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার রক্ষায় প্রস্তুত।
এদিকে ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, “উপদেষ্টা যদি মনে করেন এক হাজার টাকায় ৭% মুনাফায় সিলিন্ডার বিক্রি সম্ভব, তাহলে তিনি নিজেই বিক্রি করে দেখান।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)-এর জন্য নতুন রিগ কেনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান উপদেষ্টা, তবে এতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। ফলে সরকারকে এখনও উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
নীতিনির্ধারণী আলোচনা
কনক্লেভে অংশগ্রহণ করেন বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান, ইস্টার্ণ ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার, ইউনাইটেড আইগ্যাস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী হারুন গুরতাচ, পেট্রোম্যাক্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মার্কো অ্যান্টোনিও রড্রিগেজ, এবং আকিজ বশির গ্রুপের সিওও মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।
বাজার কাঠামো, নিরাপত্তা, পরিবেশ ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কনক্লেভটি সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
এলপিজি খাত এখন আর শুধু জ্বালানি সরবরাহের প্রশ্ন নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ জ্বালানি পরিকল্পনার অন্যতম মূল অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের বাস্তবতা সমন্বয় করেই এই খাতের টেকসই সমাধান সম্ভব।
📰 আরও খবর জানতে ভিজিট করুন:
www.shadinpratidin.com
💬 মতামত দিন | 🔁 বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন