নিজস্ব প্রতিবেদক | স্বাধীন প্রতিদিন
বুধবার সকাল ১১টায় খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) কার্যালয়ের অভিযানে খুলনার খালিশপুর হাউসিং এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই অভিযান পরিচালনায় ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোহিনুর জাহান। সঙ্গে ছিলেন সিটি কর্পোরেশন স্টেট বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, পুলিশ ও A B P N–এর সদস্যবৃন্দ।
এই উচ্ছেদ অভিযানে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের একটি সড়ক সংলগ্ন অংশের সামনে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ও সড়ক দখলকারী অবৈধ স্থাপনা ধ্বংস করা হয়। উচ্ছেদের তালিকায় রয়েছে ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও বিচারকের বাড়িও। নির্দিষ্ট করে বলা হয়, প্লাটিনাম জুটমিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আশরাফ হাওলাদার–এর ডব্লিউ-৩৭ নম্বর বাড়ি, হেমায়েত সাহেবের ডব্লিউ-৩৮ নম্বর বাড়ি এবং টি-৯৯ নম্বর বাড়ি ও রিপনের বাড়ি সহ প্রায় ১৫টি স্থাপনা। এছাড়া খালিশপুর ময়দার মিল মালিক মুন্না / নাদিমের চারতলা বাড়ির অবৈধ অংশ বুলডোজারে ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
অভিযান চলাকালে স্থানীয়রা একাধিক মন্তব্য করেছেন যে, একটি দুইতলা বাড়ির ফটক, কলাম ও ওয়াল রাস্তার ওপর থাকায় সেটি একজন বিচারকের বাড়ি হিসেবে পরিচিত। বিষয়টি প্রশাসন পরবর্তী তদন্তে মূল্যায়ন করবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
উচ্ছেদ অভিযান আরও এক দিক থেকে নজর কেড়েছে। হাটবাজার নামক দোকানের মালিক ইমরান খান ও মমিনুল ইসলাম (দ্বিতীয় জন শামী স্টোর–এর মালিক) উভয়কে ফুটপাতে মালামাল রাখার অপরাধে এক-এক হাজার টাকা করে মোট দুই হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা জানান যে, এই ধরনের অভিযান শৃঙ্খলা রক্ষার অংশ এবং নগরীর সড়ক, ফুটপাত ও খাল দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে অব্যাহত থাকবে। বাস্তবে ইতিমধ্যে কেসিসি নিয়মিতভাবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
নাগরিকদের মতে, যেসব বাড়ি ও দোকান বুধবার উচ্ছেদ হয়েছে, সেগুলোর আগে-আগে অনেকবার দখল ও অভিযোগের বিষয় ছিল — সড়কের ওপর গেট, ওয়াল, কলাম স্থাপন করে রাস্তার চলাচল ব্যাহত করছিল। এবার প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে ধ্বংস করে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে: আইন প্রয়োগ হবে।
অভিযানে অংশ নেওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা জানালেন, “আমরা বাধা দিয়েই নই; নিয়ম অনুযায়ী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অভিযান চলছে এবং যারা দখলমুক্ত না করবেন, তাদের ক্ষেত্রে জরিমানা বা উচ্ছেদ করা হবে।”
উচ্ছেদ শেষ হয়ে যাওয়া স্থানে আগত পথচারীদের অনেকেই বলেন, “এভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় দখলদারদের দৃষ্টি রয়েছে — ভবিষ্যতে অন্যেরা হয়তো আগে ভাববেন।”
এই অভিযান নগরী শান্তি ও নিয়মশৃঙ্খলা ফিরে আনার দৃষ্টান্ত বলেও বিশ্লেষক মন্তব্য করছেন। তবে তারা একাধিক সংশ্লিষ্ট বিষয়ও তুলে ধরছেন — যেমন: কেন দখলটি এত বড় পর্যায়ে গিয়ে গিয়েছিল, স্থানীয় প্রশাসন–নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার তদারকিতে কোথায় ঘাটতি ছিল, ভবিষ্যতে সড়ক, খাল, ফুটপাত থেকে দখল দমন কার্যক্রম কিভাবে নিরলস চালিয়ে রাখা যাবে।
এরমধ্যে খালিশপুর হাউসিং এলাকার বাসিন্দারা বিশেষভাবে সুখপ্রকাশ করেছেন যে, রাস্তার ধারে বড় বড় অবৈধ স্থাপনা ও মালামাল থাকায় প্রতিদিন যানজট ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ছিল — আজ উচ্ছেদের পর যাতায়াত আর একটু নিরাপদ হয়েছে বলেই তাদের দাবি।
সব মিলিয়ে বলা যায়, বুধবারের এই অভিযান নগরীর আইনশৃঙ্খলা ও জননাগরিক স্বার্থ সুরক্ষার দিক থেকে সাড়া ফেলেছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে — এই ধরণের উদ্যোগকে ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে রাখা। শুধুই একবার উচ্ছেদ করলেই হবে না; দখলের বোঝাপড়ার সংস্কৃতি যাতে পুনরায় না গড়ে ওঠে তার জন্য নিয়মিত নজরদারি, দ্রুত অভিযোগ নিষ্পত্তি ও সচেতনতা বৃদ্ধিই বড় চ্যালেঞ্জ।
📰 আরও খবর জানতে ভিজিট করুন:
www.shadinpratidin.com
💬 মতামত দিন | 🔁 বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন