সাতক্ষীরা প্রতিনিধি | স্বাধীন প্রতিদিন
বাংলাদেশের গর্ব, সাতক্ষীরার কিশোর সুদীপ্ত মণ্ডল এবার মনোনীত হয়েছে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য, যেটি অনেকে শিশুদের জন্য 'শান্তি নোবেল' বলেই চেনে। এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতির জন্য মনোনয়ন পাওয়া সে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় শিশু। এর আগে ২০১৮ সালে বরিশালের কিশোরী সাদিয়া রহমান এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে সমাজ পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে যে পথচলা শুরু করেছে সুদীপ্ত, তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলো এই মনোনয়নের মাধ্যমে। শিক্ষা, পরিবেশ সচেতনতা, বাল্যবিবাহ রোধ ও শিশু অধিকারের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখা সুদীপ্তের কাজ ইতোমধ্যেই দেশীয় বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচিত ছিল।
সুদীপ্ত মণ্ডল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই মানবিক কাজে আগ্রহী সে। স্কুলে পড়ার পাশাপাশি নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছে 'শিশু পরিবেশ বন্ধু' নামে একটি শিশু-কিশোর সংগঠন, যার নেতৃত্বে চালানো হচ্ছে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ, এবং পথশিশুদের সহায়তা কার্যক্রম।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও শিশুদের উপর তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে সুদীপ্তর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, তার উদ্যোগে এলাকার কয়েকটি স্কুলে যৌন হয়রানি ও বাল্যবিবাহ রোধে বিশেষ কর্মশালা আয়োজন করা হয়, যা ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।
প্রতিবছর ‘কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন’ (KidsRights Foundation) সারা বিশ্বের শিশুদের মধ্যে থেকে সমাজ পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা শিশুদের এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়ে থাকে। এই পুরস্কারকে অনেকেই শিশুদের ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’ বলে অভিহিত করেন।
২০২৫ সালের জন্য মনোনীত শিশুদের মধ্যে বাংলাদেশি কিশোর সুদীপ্ত ছাড়াও রয়েছে আফ্রিকা, ইউরোপ, ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের শিশু। চূড়ান্ত বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে আগামী ডিসেম্বর মাসে, নরওয়ের অসলোতে আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে।
বাংলাদেশ থেকে এই পুরস্কারের ইতিহাস খুবই সীমিত। ২০১৮ সালে বরিশালের কিশোরী সাদিয়া রহমান শিশু অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে মনোনয়ন লাভ করেছিল। তবে এবার প্রথমবারের মতো একজন কিশোর পরিবেশ ও শিশু-সুরক্ষার যৌথ কার্যক্রমের জন্য মনোনীত হলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু সুদীপ্তর নয়, বরং বাংলাদেশের শিশু অধিকার আন্দোলনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
সুদীপ্তর বাবা কৃষক পেশায় যুক্ত, আর মা গৃহিণী। সন্তানের এমন অর্জনে তারা আনন্দিত ও গর্বিত। সুদীপ্তর বাবা বলেন, “আমরা ছেলেকে সবসময় মানুষের উপকার করতে শিখিয়েছি। আজ সে বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে — এটা আমাদের জন্য স্বপ্নের মতো।”
স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং প্রতিবেশীরা সুদীপ্তকে অভিনন্দন জানাতে তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন।
নিজের অর্জনে গর্বিত হলেও, সুদীপ্তর চোখ এখনো ভবিষ্যতের দিকেই। তার ভাষায়, “সব শিশু যেন নিরাপদে বড় হতে পারে, তাদের কথা কেউ যেন শুনে — আমি সেই কাজটাই করতে চাই। এই মনোনয়ন আমাকে আরও অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
সাতক্ষীরার ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসা সুদীপ্ত আজ শিশুদের অধিকার ও পরিবেশ রক্ষার প্রতিনিধি হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বদরবারে। তার এই অর্জন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়, যা দেশের অন্য শিশু-কিশোরদেরও অনুপ্রেরণা জোগাবে।
📰 আরও খবর জানতে ভিজিট করুন:
www.shadinpratidin.com
💬 মতামত দিন | 🔁 বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন